বর্ষশেষ... চৈত্র-অবসান... এই সন্ধেটা এলেই মনে পড়ে যায় অনেক বছর আগের এক চৈত্রশেষের সন্ধে ... শান্তিনিকেতনের মন্দিরে (বেলজিয়াম গ্লাসের উপাসনা গৃহে)... অপূর্ব একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন... মন্দিরের বাইরে থেকে শুধু শোনা যাচ্ছিল এস্রাজ আর সেতারের মীড়... দেখা যাচ্ছিল না কোনও শিল্পীকে... শুধু দেখা যাচ্ছিল বাদ্যযন্ত্রগুলির উপরাংশ ... মন্দির-ঘেরা নীচু পাঁচিলে জ্বলছিল সারিবাঁধা মোমবাতি... শুরু হয়েছিল অল্প ঝোড়ো বাতাস আর পাতার মর্মর ধ্বনি ... কিন্তু বাতাসে নেভেনি একটিও মোমবাতির শিখা... আমরা পৌঁছেছিলাম ৬-৪৫ এ... আমি, বাবা, মা, কোয়েল... বসেছিলাম মন্দিরের বাইরের সিঁড়ির ধারে ধারে... ঠিক সন্ধে ৭টায় প্রথম গান শুরু হল মন্দিরের ভিতরে... আজ আর মনে নেই কী কী গান হয়েছিল, কিন্তু মনে আছে অশ্রুত না-জানা গান বেশ কয়েকটা... অসাধারণ কন্ঠ ও গায়কী শিল্পীদের ... নাম জানিনা তাঁদের... না, দেখিওনি তাঁদের... শুধু তাঁদের গান শুনেছিলাম মুগ্ধ, আবিষ্ট হয়... মন্দিরের মতো একটি অপার্থিব স্থানে... চৈত্রশেষের অস্থির বাতাসে... পাতার মর্মর ধ্বনির মধ্যে ..ঠিক এক ঘন্টার অনুষ্ঠান... সেই সন্ধেটি ভোলার নয় ... সেদিন রাত্রে তুমুল ঝড় আর বৃষ্টি ।। আমি আর কোয়েল এমনিতেই গল্প-আড্ডা সেরে চোখ বন্ধ করেছি অনেক রাতে, তারপর অদ্ভুত কিছু শব্দে আর স্বপ্নে ঘুম হয়নি... পরদিন ভুবনডাঙ্গা মাঠের প্রভাতী অনুষ্ঠানে যাওয়া হলনা আমাদের, উঠতে দেরী হয়ে গেল সকলের... মনে যেন চৈত্রশেষের অনুষ্ঠানের রেশ রয়ে যায়, তাই যেন এই ঘটনা... মন্দিরের সেই চৈত্র সন্ধ্যা ভুলবনা কোনদিন ... বাবা, এরকম কত অজস্র স্মৃতি তৈরি হয়েছে, শুধু তোমার জন্য... প্রতি বছর এই দিন সেই সন্ধ্যের কথা মনে পড়ে আমার... কোয়েল, আমি, মা, তুমি...
No comments:
Post a Comment